Subject Review Material Science Engineering

Material Science and Engineering (MSE) Subject Review

বেশিরভাগ মানুষের কাছে বেশ অপরিচিত এবং বিদখুটে নাম। তবে সিভিল বা মেকানিকালের মত এটিও অনেক পুরাতন ইঞ্জিনিয়ারিং বিদ্যা।মানুষ যখন থেকে তামা আবিষ্কার করে তখন থেকেই মূল যাত্রা শুরু। 

এর ইতিহাস নিয়ে কিছুই বলব না, যারা আগ্রহী তারা উইকিপিডিয়া থেকে পড়ে নিতে পার। সরাসরি চলে যাচ্ছি এখানে কি পড়ানো হয়, এখানে পড়ে কি কি করতে পার আর এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনায়।

Subject Review Material Science Engineering

Material Science and Engineering (MSE) Subject Review

কি পড়ানো হয়ঃ

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে সব কিছু কোন না কোন উপাদান দিয়ে তৈরি। আর এই ‘উপাদান’ নিয়েই এম এম ই। নামে ধাতবকৌশল দেখে ভাবার দরকার নেই শুধু ধাতু এবং সংকর ধাতু নিয়ে এম এস ই। বরং আমাদের বাড়ির চামচ থেকে যুদ্ধের ময়দানের ট্যাঙ্ক, পানির নিচের সাবমেরিন থেকে মহাকাশযান- সব কিছুর সাথেই এমএসই এর সম্পর্ক। সকল বস্তুকে ৫টি প্রধান ভাগ(মেটাল, সিরামিক, সেমিকন্ডাক্টার, পলিমার, কম্পোজিট) করে কাজ করে এমএসই।

মেটাল কি

কিভাবে খনি থেকে আকরিক আহরণ করা হয়, কিভাবে তা থেকে ধাতু নিষ্কাশন করা হয়, সংকর ধাতু কিভাবে তৈরি করলে তা মানুষের বেশি কাজে আসবে কিন্তু খরচ হবে কম, কিভাবে রিসাইকেল করে কোন ধাতব বস্তুকে কাজে লাগানো যায়, জাহাজ, প্লেন, মহাকাশযান, গাড়ির বডি,ইঞ্জিনের উপাদান কি হবে যেন তা সহজে নস্ট না হয়, পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় এরকম হাজারো ব্যাপার।

সিরামিক কি  

বাসার নিত্য প্রয়োজনীয় থালা-বাসন,মেঝের টাইলস ছাড়াও সিরামিকের বিশাল একটা ক্ষেত্র আছে। উচ্চতাপমাত্রায় কাজ করার যন্ত্র, অপটিক্যাল ফাইবার, ইনসুলেটর, সিমেন্ট, কৃত্তিম অঙ্গ তৈরি এরকম অনেক জায়গায় সিরামিক লাগে।

সেমিকন্ডাক্টার কি

ইলেক্ট্রিক চিপ এখন সব যায়গায়। আর এমএসই এর কাজের একটা বড় ক্ষেত্র এখানে।কিভাবে কোন ইলেক্ট্রনিক ম্যাটেরিয়াল কাজ করবে, কত ভোল্টেজ, তাপমাত্রা পর্যন্ত সহ্য করতে পারবে এসবই নির্ভর করে উপাদানের উপর। আর উপাদান মানেই এমএসই।কিভাবে ইলেক্ট্রনিক স্ট্র্যাকচার চেঞ্জ হয়, ব্যান্ড থিওরি, কোয়ান্টাম স্ট্র্যাকচার যেমন quantum well , quantum dot এসব নিয়েও কাজ হয় এমএসইতে

পলিমার কি

পলিমার কি তা আলাদা করে বলার দরকার পড়বে না। পলিমারের প্রচুর জিনিস আমরা ব্যবহার করি। এসবের প্রস্তুতি,গুনগত মান রক্ষা সবই এম এমইর আওতায় পড়ে।

কম্পোজিট কি

 উপরের ৪ প্রকার ম্যাটেরিয়ালের সমন্বয়ে যেসব বস্তু বানানো হয় তারাই এর অন্তর্ভুক্ত। শুধু ধাতু বা সিরামিকের তৈরি কোন কিছুর মান উন্নয়নে অন্য কিছু যোগ করে তৈরি হয় কম্পোজিট। খেলার র্যারকেট, আধুনিক উচ্চ গতির প্লেনের বডি, বুলেটপ্রুফ ভেস্ট বা গ্লাসসহ আরো অনেক কিছুই কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালসের আওতায় পড়ে।

এসবই পড়ার মূল বিষয়। আগামি ৪ বছর এসবেরই বিভিন্ন ধর্ম, কিভাবে কাজ করে, কিভাবে ডিজাইন করে এসব নিয়ে পড়তে হবে। চাইলে ওয়েবসাইট থেকে সিলেবাস দেখে নিতে পার। 

কাজের ক্ষেত্রঃ

১. যদি কারো গবেষণার ইচ্ছা থাকে তবে নিয়ে নিতে পার চিন্তা ছাড়াই। বাংলাদেশে খুব বেশি গবেষণার সুযোগ না থাকলেও বিশ্বে যত গবেষণা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি শাখা ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স। তাই ব্যাচেলর ডিগ্রি নিয়ে বিদেশে চলে যেতে পার আর নিজের মত নতুন একটি ম্যাটেরিয়াল আবিষ্কার করে পৃথিবীকে চমকে দিতে পার।

২. যাদের বিদেশে যাবার ইচ্ছা নেই বা ৯-৫টা অফিস করার ইচ্ছা তারাও হতাশ হবে না। দেশে মূলত স্টিল ফ্যাক্টরিতে সুযোগ আছে। সেই সাথে সিরামিক, গ্লাস ইন্ডাস্ট্রি, গ্যাস ফিল্ড ছাড়াও প্রায় সকল প্রকার ইন্ডাস্ট্রিতে এখন সুযোগ তৈরি হয়েছে।

৩. এমএমই এর কাজের ক্ষেত্র আরো বড়। ন্যানোটেক,বায়ো মেডিকেল, ইলেকট্রিক্স এরকম বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল, ইচ্ছা ছিল ইইই পড়ে ওসব করবে কিন্তু ইইই পাচ্ছো না, তাদের বলছি তোমাদের আশা এখনো আছে কারণ এমএসই থেকেই এসব এসেছে। তাই ভবিষ্যতে এসবের পড়ার ভালো সুযোগ এখনো তোমার আছে। Intel ,IBM এর মত প্রতিষ্ঠানে কাজ করারও সুযোগ রয়েছে এখান থেকে।

৪. ক্যান্সার সহ বিভিন্ন জটিল রোগের গবেষণায় এমএসই এখন অনেক ভুমিকা রাখছে। হাড়,দাঁত প্রতিস্থাপন, কৃত্তিম পা, হাত সবই ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্টিস্টরা করছে। কারণ মানুষের দেহে এসব প্রতিস্থাপন করতে হলে এমন উপাদান হতে হবে যা শরীরের কোন ক্ষতি করবে না। আর উপাদান মানেই তো এমএসই।হয়তো তোমাদের মধ্যেই কেউ কম খরচে কৃত্তিম কিডনি বা সেরকম কিছু বানাবে, ক্যান্সারকে নির্মূল করবে- বাঁচাবে হাজার হাজার প্রান।
তাই কোন প্রকার দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছাড়াই এম এস ই কে সঙ্গী করে নিতে পার তোমার জীবনে। আধুনিক সমৃদ্ধ বিশ্ব তোমারই অপেক্ষায়।

MSE Subject Review

MME বা MSE হল রিসার্চ বেইজড সাব্জেক্ট

দেশে বা বিদেশে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করার সুযোগ কম। দেশে সরকারি চাকরি নাই। বছরে ২/৩ টা পদে সরকারি চাকরির সার্কুলার আসতেও পারে, নাও পারে। বেসরকারি চাকরির পরিবেশ দেশে ভয়াবহ রকমের খারাপ। কোন ভবিষ্যৎ নেই।

MME তাদেরই পড়া উচিৎ যারা সারাজীবন গবেষণা করে রিসার্চ ল্যাবে জীবন কাটাতে চায়, তাও শুধু বিদেশে। দেশে কাজ নাই। বিদেশ থেকে এম.এস. বা পিএইচডি করে দেশে ফেরত আসলে MME এর কোন সুযোগ নেই কোন চাকরি করার। ডিপার্টমেন্ট এর শিক্ষক না হলে বাহিরে থেকে দেশে ফেরত আসার ফল হতাশাজনক। 

Civil, Electrical, Mechanical, WRE, CSE, Chemical (এরাই বুয়েটে-দেশে রাজত্ব করে, লিড দেয়, বাকিরা ব্রাত্য) ইঞ্জিনিয়াররা বিদেশী ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে আসলে অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে যা এই বস্তু ও ধাতব কৌশলীদের থাকে না। তাই বিদেশে যাওয়া মানে চিরতরে যাওয়ার উদ্দেশ্য যাদের তাদের জন্যে ভাল।

আর ওই Intel, NASA এসবের আকাশ-কুসুম অবাস্তব দিবাস্বপ্ন দেখে বা দেখিয়ে লাভ নেই। ৯০% ছেলেপেলের পক্ষে তা সম্ভব না। আর বুয়েটে EEE তে টিচার হওয়াও যেমন কষ্ট, MME, WRE, URP তে ও একই কষ্ট। ভাল রেজাল্ট করা বুয়েটে কঠিন। এভারেজ সিজিপিএ 3.30. প্রতি ব্যাচে দুএক জন ৩.৮০ এর উপরে পায়। তারাই ওই ইন্টেলের স্বপ্ন দেখতে পারে। তাদের মধ্যেও অর্ধেকও সেই স্বপ্নের নাগাল পায় না। তাই বুঝে-শুনে-ভেবে সিদ্ধান্ত নাও।

বিদেশে ভাল স্কলারশিপ এর জন্যে রেজাল্ট ভাল রাখতে হবে। সিজিপিএ নূন্যতম 3.00 out of 4.00 না রাখতে পারলে লাভ নেই। রেজাল্ট এর থেকে খারাপ হলে জাতীয় ভার্সিটি পাস ছেলেপেলের মতই অবস্থা হবে।কমপক্ষে 3.50 CGPA তোমাকে বিদেশে হায়ার স্টাডিজে ভাল ফান্ডিং-স্কলারশিপ এর নিশ্চয়তা দেবে। এর কম হলে ভাল ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া কঠিন।

তাই, MME পড়ার শুরু থেকেই বিসিএস এর জন্যে পড়া শুরু করে দেয়া উচিৎ যদি কারো দেশেই থাকার ইচ্ছা থাকে। অথবা BUET -MME থেকে পাস করে IBA-MBA. করতে পারলে দেশে ভাল চাকরি হবে ম্যানেজমেন্ট লাইনে।যদি BUET এ পড়ার খুবই ইচ্ছা থাকে, তাহলে যেকোন সাব্জেক্টেই পড়ার মানসিকতা থেকে MME নিয়ে পড়। পরে BCS বা MBA করে দেশে থাক। নাহয় বিদেশে যাও। BCS বা সরকারি চাকরিতে শুধু EEE, Mechanical, Civil and CSE এর ক্যাডার সার্ভিস আছে। বাকিদের নেই।

তোমাদের ভাবতে হবে, সাব্জেক্ট আগে নাকি ভার্সিটি আগে। BUET MME থেকে KUET/CUET/RUET/
SUST/DU/IBA তে ভাল সাব্জেক্ট পেলে সেখানেই পড়া উচিৎ বলে একজন বুয়েট এম এম ই গ্রাজুয়েট হিসেবে আমি মনে করি।

ইঞ্জিনিয়ার হবার ইচ্ছা থাকলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্যে বেসিক তথা মাদার সাব্জেক্ট বেছে নেয়া উচিৎ। মূল বিষয় বলতে EEE, CSE, Mechanical, Civil, Chemical Engineering এই কয়টা যাতে সব পথ খোলা থাকে। MME/MSE এর মত সাব্জেক্ট একজন ছাত্রের চলার পথের অনেক পথ বন্ধ করে দেয়।

মূলত BUET এ Materials & Metallurgical Engineering বিষয়টা শুধু মাস্টার্সেই থাকা ঠিক ছিল। কারো মেটালার্জিতে পড়ার ইচ্ছা থাকলে মাস্টার্স করে নেবে, সেটাই ভাল। এমনকি WRE এর সুযোগও MME থেকে বেশি। চয়েজে WRE MMEর আগে দেয়া ভাল, বুদ্ধিমানের কাজ। 

আর নামের পাশে বুয়েট নামের ভার্সিটির সিল-ডিগ্রী যাদের একান্তই লাগবে তারা বুয়েটে ভর্তি হও। যতদিন ছাত্র ততদিন দাম। পাস করলে বাস্তবতা ভিন্ন। ডিপার্টমেন্ট ভাল হওয়া আর সাব্জেক্ট ভাল হওয়া কিন্তু আলাদা ব্যাপার, সেটা মাথায় রেখ সবাই। 

Department ভাল মানে টিচার ভাল, পরিবেশ ভাল, Teacher দের outreach relation কেমন সেটা। সাব্জেক্ট ভাল মানে পড়ে শেখার সুযোগ ভাল।MME পড়তে ভাল লাগবে আশা করি। বিষয়টা পড়ার, বর্ণনামূলক বেশি। বুঝলে ভালই লাগবে। এনজয় করে পড়বা, ভালই লাগবে।
Next Post Previous Post