ভূগোল ও পরিবেশ সাবজেক্ট রিভিউ

 Geography and Environmental Subject Review 

Geography and Environmental science


আমাদের দেশে পড়ালেখার জন্য ভূগোল নতুন কোনো বিষয় নয়। কিন্তু সেই শুরুর আমল থেকেই বিষয় নির্বাচনের
ক্ষেত্রে ভূগোল একরকম উপেক্ষিতই ছিল সবার কাছে। 

Q. কেন হব ভূগোলবিদ ?

একজন ভূগোলবিদ একাধারে ভূ-বিজ্ঞান থেকে শুরু করে জলবায়ু তত্ত্ব, সমুদ্র তত্ত্ব, উদ্ভিদ-ভূগোল তত্ত্ব, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, বাস্তুসংস্থানবিদ্যা, দুর্যোগ মোকাবিলা, নগর পরিকল্পনা, গ্রামীণ পরিকল্পনা ইত্যাদি নানা বিষয়ে পারঙ্গমতা লাভ
করেন। তাই দেশের দুর্যোগ মোকাবিলায় যেমন ডাক পড়বে একজন ভূগোলবিদের, তেমনি জলে-স্থলে-শূন্যে যে কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভূগোলবিদের বিকল্প খুঁজে পাওয়া ভার। 

শুনতে অবাক হলেও এটাই সত্যি যে, 
মানুষ প্রথম যে অভিযানে চাঁদের বুকে সভ্যতার পায়ের ছাপ এঁকে দিয়ে আসে, সে অভিযানে এই ভূগোলবিদদের অবদান ছিল একেবারে সর্বাগ্রে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, পৃথিবীতে মেধাবী জিওগ্রাফারের চাহিদা সবার শীর্ষে থাকলেও প্রতিবছর খুব কম ছেলে- মেয়েই ভূগোলবিদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে। আর দিন দিন উন্নত দেশগুলোর বৈশ্বিক রাজনীতির পাশাপাশি ভূ- রাজনৈতিক কৌশল পরিবর্তন হওয়ায় ভূগোলবিদদের কদর বরং বেড়েই চলেছে।

জলবায়ুতে ভূগোল, কৃষিতে ভূগোল, দুর্যোগ মোকাবিলায় ভূগোল, নগর ও গ্রাম পরিকল্পনায় ভূগোল, ডেভেলপমেন্টে ভূগোল, এমনকি মানুষ মারার যে যুদ্ধ, সে যুদ্ধেও এখন ভূগোল ও ভূগোলবিদদের জয় জয়কার।

ভূগোল ও পরিবেশ  চাকরির ক্ষেত্র :

ভূগোল বা ভূগোল সম্পর্কিত পড়ালেখার পাঠ চুকানোর পর একজন ভূগোলবিদ বাংলাদেশেই একটা খুব ভালো মানের চাকরি জুটিয়ে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে 
  • রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান,
  • জেনারেল সার্ভে অব বাংলাদেশ, 
  • স্পেস রিসার্চ অ্যান্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশন (স্পারসো)
হতে পারে সবার প্রথম পছন্দ। এ ছাড়া যেসব এনজিও পরিবেশ, জলবায়ু এবং জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করে, তারাও একজন মেধাবী জিওগ্রাফারকে অত্যন্ত সম্মানজনক বেতনে চাকরি দিয়ে থাকে। আর ভূগোল বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নিলে দেশের পাশাপাশি দেশের বাইরেও থাকবে সোনালি ভবিষ্যতের হাতছানি।

জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ করার সুযোগের পাশাপাশি কাজের সুযোগ মিলতে পারে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসাতেও। মাস শেষে আয় সাধারণত দেশীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একজন ভূগোলবিদের বেতন সরকারি স্কেলেই ধার্য করা হবে।

মোটা দাগে বলতে গেলে, সে বেতনের পরিমাণ প্রাথমিকভাবেই ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায় গড়াবে। চাকরির মেয়াদ শেষ হতে হতে সেই অংকের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়াতে পারে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। এ ছাড়া এনজিওগুলোতে বেতন শুরুই হবে ৫০-৬০ হাজার টাকা থেকে। চাকরির পূর্ণ মেয়াদ শেষে এই অংকটি দাঁড়াবে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকায়।
তবে দেশের বাইরের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা।সঠিক ডিগ্রিটি নিজের ঝুলিতে থাকলে বেতন শুরুই হবে ১০ লখি টাকা দিয়ে।

Q. ভূগোল ও পরিবেশ সাবজেক্ট কোথায় পড়বেন ?

বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়টি পড়ানো হয়। এ
ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেয়া যায়। অল্প কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও
বিষয়টি পাঠ্য বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর দেশের বাইরে পড়ালেখার সুযোগ তো রয়েছেই।

নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত থাকলে ,

প্রথমেই দরকার একটি সুবিন্যাস্ত পরিকল্পনা। কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌকাঠে পা রাখার আগেই ঠিক করে নিন ভবিষ্যতের উদ্দীষ্ট লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়টি হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ।মেধাবী ছেলে-মেয়েদের ভূগোল পড়তে আসা উচিত ভৌগোলিক কারণেই আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা বেশ মেধাবী।

অনুন্নত দেশ অর্থাৎ অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতার কারণে বেশিরভাগ বাবা-মাই তাদের ছেলে-মেয়েকে ব্যাংকার কিংবা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাতে চান। যার কারণে ভূগোলের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মেধাবী ছেলে-মেয়েদের আমরা পাই না। অথচ একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটাই ছিল সবচেয়ে জরুরি। উন্নত দেশগুলো এই
সেক্টরে প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করছে। এর ফলও তারা পাচ্ছে। তাদের কাজের পরিধি এখন শুধু পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ নয়।

BSc geography and environmental science :

তারা এখন পৃথিবী ছেড়ে মহাকাশ জয় করতে গিয়েছে। চাঁদের ম্যাপিং তাদের জিওগ্রাফাররা করে দিয়েছে। মঙ্গলের ম্যাপিংও তাদের জিওগ্রাফারদেরই করা। অথচ আমাদের দেশে হয় এর উল্টো। মেধাবী ছেলেরা শুধু ডাক্তারী- ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়। ওটা পড়তে না পারলে তাদের আর কোনো লক্ষ্য থাকে না। এরপর দেখা যায়, যে যেই
বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করেছে সে সেই ডিপার্টমেন্টে চাকরি না করে অন্য ডিপার্টমেন্টে করছে। ইংরেজি সাহিত্যের ছেলেটি বিসিএস পরীক্ষা দিয়ে পুলিশের এএসপি হয়ে বসে আছে।

ফিজিক্সে পড়া মেয়েটি রাজস্ব কর নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। আর অর্থনীতি পড়া ছাত্রটি ভূমিকম্পের আগাম সতর্কবার্তা দিচ্ছে! এভাবে চললে তো দেশ আগাবে না। প্রতিটি সেক্টরে সঠিক লোকটিকেই প্লান্ট করতে হবে। এ জন্য চাই জাতির
মেধাবী সন্তানদের। সুতরাং আমি বলব, জিওগ্রাফি কোনো হেলাফেলার বিষয় নয়। এখানে মেধাবী ছেলে-মেয়েদের আরও বেশি করে পড়তে আসা উচিত। দেশ ও জাতির উন্নয়নের স্বার্থে তাদের মেধা ব্যবহারের আর কোনো বিকল্প নেই। বিভিন্ন এনজিওতে পড়া শেষ করার সাথেই চাকরি রেডি পাবেন।। তাই দেরি না করে পড়া শুরু করুন এটাতে।
Next Post Previous Post