Criminology and police science subject review
ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স সাবজেক্ট রিভিউ
অপরাধ নিয়ে পড়াশোনা কেমন হতে পারে?
অপরাধ বর্তমান বিশ্ব তথা বাংলাদেশে একটি অন্যতম প্রধান সমস্যা।বাংলাদেশে অপরাধ যে পড়ার বিষয় হতে সর্বপ্রথম টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ চালুর মাধ্যমে বিকশিত হয় ২০০৩ সালে। ব্যাতিক্রিম এই বিভাগটি শুধুমাত্র সাউথ এশিয়ায় বাংলাদেশেই চালু হয়েছে। অপরাধ দমনই নয়, সেই সাথে অপরাধের কারন, ধরন-প্রকৃতি বিশ্লেষন, বিভিন্ন তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোন থেকে অপরাধ সংঘটনের ব্যাখ্যা এই বিভাগের পাঠদানের বিষয়বস্তু।
উদাহরনস্বরুপ, মানুষের শারীরিক গঠনের সাথে অথবা জেনেটিক কারনেও যে একজন ব্যাক্তি অপরাধপ্রবন হয়ে উঠতে পারে এ ধরনের কিছু বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও এই বিষয়ে পড়লে জানতে পারবেন। আবার অপরাধবিজ্ঞানী সাদারল্যান্ড বলেছেন মানুষ অপরাধী হয়ে উঠে তার আশেপাশের সঙ্গীদের সাথে মেশার মাধ্যমে।অপরদিকে মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড অপরাধ সংগঠনের মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ক্রিটিক্যাল চিন্তাবিদ কার্ল মার্ক্স বলেছেন সমাজের অপরাধ হচ্ছে সমাজে শ্রেনী দন্দ্বের ফলাফল।পোস্ট মর্ডানিস্ট ফুকো বলেছেন সমাজে যে কোন বৈষ্যম্যই অপরাধ সৃষ্টির মূল কারন। এ ধরনের নানা ব্যাখ্যা পাবেন এ বিষয়ের পাঠ্যক্রমে।
![criminology and police science subject review criminology and police science subject review](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEivsImDHT7D3joQyiWemig1DwNRGYi65NrBdzxgWoL-ryi9uxibdVj57D-IqxFyRGtaK03HkbCrotHJLaMmLRCLC95FI4OF7_X-NDrqgQMDP5mZ1O6DXT7xw4dfdbdNj_cjYrKCiYUA42ogk-3j7AD4u1WLI83ENbGoYXKcOjEF92gd94pNjt56szE/w400-h268-rw/police-1167101_1920-_1_%20(1).webp)
ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের পাঠ্যক্রমের মধ্য উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো
অপরাধবিজ্ঞানের পরিচিতি, অপরাধ বিজ্ঞানের তত্ত্ব, অপরাধ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষনা পদ্ধতি, অপরাধ বিজ্ঞানের ইতিহাস, কিশোর অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, ভিকটিমোলজী, অপরাধের সমসাময়িক ত্তত্ব ও ইস্যুজ, অপরাধীয় বিচার ব্যাবস্থা, সাইবার ক্রাইম, ক্রাইম ম্যাপিং সহ নানা যুগোপযোগী কোর্স।পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রন ও অপরাধের কারন উদ্ঘাটনের জন্য একজন পুলিশের ভূমিকা কি হতে পারে সেটাও ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের পাঠ্যক্রমে পাঠদান করানো হয়।
দক্ষ পুলশিং এর জন্য ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন, ক্রোর ইস্যুজ ইন পুলিশিং, পেনাল কোড, এভিডেন্স এক্ট, পুলিশ ইনফরমেশন টেকনোলজি, ক্রিমিনাল ল’, ফরেনসিক সায়েন্স ইত্যাদি বিষয় এ বিভেগের পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভূক্ত। বর্তমানে এ বিভাগে পনের জন শিক্ষক আছেন যাদের ক্রিমিনোলজী, সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রী রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসারগণও বিভিন্ন কোর্স পরিচালনা করে থাকেন।
হাতে কলমে ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স শিক্ষাদানের জন্য
ছাত্রছাত্রীদের বিভন্ন সময় বাংলাদেশ পুলিশের ক্রিমিনাল ইনভেষ্টিগেশন বিভাগ, ঢাকাস্থ ফরেনসিক ল্যাব, সারদা পুলিশ একাডেমি, কোস্ট গার্ড চিটাগাং, শিশু উন্নয়ন সংস্থা, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার, বাংলাদেশ প্রিজন সহ বিভিন্ন মানবধিকার সংস্থায় ফিল্ড ভ্রমনে নিয়ে যাওয়া হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রিজনের সাথে অত্র বিভাগের একটি সমঝোতা চুক্তি সাক্ষর হয় যার মাধ্যমে বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা বাংলাদেশ প্রিজনে ইন্টার্নশীপ ও গবেষনার সুযোগ পাবে।
এছাড়া বিভাগে নিজস্ব ফরেন্সিক ল্যাবও আছে যেখানে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন প্রশিক্ষন দেওয়া হয়।পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষ করে তোলার জন্য বিভাগে একাডেমিক শিক্ষার অংশ হিসাবে নিয়মিত সেমিনার, কনফারেন্স, ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়ে থাকে।
দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ক্যারিয়ার
‘ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স’ অপরাধ এবং পুলিশ সংক্রান্ত হলেও এর ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত। দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ বিষয়ে পড়ার পর সহজেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। ইতিমধ্যোই এ বিভাগ থেকে সফলভাবে ডিগ্রী সম্পন্ন করে গ্রাজুয়েটরা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী, বিভিন্ন বিসিএস ক্যাডার, এনএসাইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন,সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠান, দেশীয় ও আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা, বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান, আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাসহ নানা সেক্টরে সুনামের সাথে কর্মরত রয়েছে।
ছাত্রছাত্রীরা সহজেই কর্মজীবন শুরু করার জন্য মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারে আছে ইন্টার্নশীপ কোর্স যার মাধ্যমে তারা তাত্ত্বিক জ্ঞান প্রায়োগিক ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর সুযোগ পায়। দেশের বাইরে বললে ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড জাস্টিস ইনস্টিটিউট নামে রয়েছে জাতিসংঘের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া ইউনাটেড নেশনস অফিস অফ ড্রাগ এন্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), ইন্টারপোল, ইউনিসেফ, ইন্ট্যারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন, ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্ট্যারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে ইন্টার্নশীপ ও কাজের সুযোগ আছে এ বিভাগে পড়ার মাধ্যমে।
ইতিমধ্যো এ বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ইউনাটেড নেশনস অফিস অফ ড্রাগ এন্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি), ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইন্ট্যারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন, ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন অর্গানাইজেশন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্ট্যারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনে কাজের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে এবং সুনামের সাথে কর্মরত রয়েছে।
সম্প্রতি সাফল্যর আরেকটি পলক যোগ হয়েছে মাননীয় আইজিপি মহোদয়ের ঘোষনার মাধ্যমে যেখানে তিনি অত্র বিভাগের গ্রাজুয়েটদের বাংলাদেশ পুলিশের উপপরিদর্শক (সাব ইন্সপেক্টর) পদে নিয়োগের আলাদা সুযোগ প্রদান করবেন। উচ্চশিক্ষার কথা বললে নর্থ আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ক্রিমিনোলজী বিষয়। ইতিমধ্যো এই বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী দেশের বাইরে উচ্চতর শিক্ষাগ্রহন করছে আবগ সম্পন্ন করছে।
সর্বপোরি শুধু ক্যারিয়ারের বিষয় চিন্তা করেই নয় একটি চ্যালাইঞ্জিং বিষয় পড়তে চাইলে ক্রিমিনোলজী এন্ড পুলিশ সায়েন্স হতে পারে আপনার আগ্রহের বিষয়। একজন অপরাধ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হয়ে যখন পাঠ্যক্রমের গবেষনার প্রয়োজনে অথবা কোন এসাইনমেন্টের কারনে কোন খুনী, সন্ত্রাসীর কাছ থেকে সরাসরি গবেষনার তথ্য সংগ্রহ করবেন অথবা একজন অপরাধের শিকার হওয়া ভিকটিমের কাছ থেকে তার অভিজ্ঞতা শুনবেন তখন আপনি এই বিষয়ে পড়ার সত্যিকারের রোমাঞ্চ লাভ করবেন।
এই বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে সমাজে আপনার আশেপাশে সংগঠিত অপরাধ, আপরাধী, ভিকটিম, অপরাধ নিয়ন্ত্রন ব্যাবস্থা এবং সমাজ সম্পর্কে আপনার ধারনা অন্য দশজনের থেকে আলাদা দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে পারবেন যা আপনাকে একজন পূর্নাঙ্গ মানুষ হয়ে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।